খেলা আর লেখাঃ অনিন্দ্য রায়

কেনিয়া জয়ন্তীলাল। ক্রিকেটার। ভারতের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। নিজের সময়ে শর্টপিচ বলের বিরুদ্ধে দক্ষতায় অন্যতম, হুক পুলে সাবলীল, ডিফেন্স জমাট। ছিলেন ১৯৭১-এ অজিত ওয়াদেকার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জেতা দলের সদস্য। কেনিয়া জয়ন্তীলাল। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতেন হায়দ্রাবাদের হয়ে, রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক ম্যাচেই ১৫৩ করেন ১৯৬৮-৬৯ মরসুমে। দেশের মাটিতে এই সব পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করেই সুযোগ পান ক্যারিবিয়ান সিরিজে। দলে আরেক নতুন ওপেনার চোট পাওয়ায় কিংস্টনে প্রথম টেস্টে অভিষেক হয় জয়ন্তীলালের। প্রথম দিন ১৮ই ফেব্রুয়ারি খেলা হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের

সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরের দিন আবিদ আলির সঙ্গে ইনিংসের শুরু করেন জয়ন্তীলাল। টিমের রান তখন ১০, ব্যক্তিগত ৫ রানে শিলিংফোর্ডের একটি বল খেলতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে ব্যাট সরিয়ে নেন তিনি। কিন্তু বল ব্যাটের কোণায় ছুঁয়ে উড়ে যায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্লিপের মাঝামাঝি। দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা বাঁহাতি গ্যারি সোবার্স ডানদিকে ঝাঁপিয়ে মাটি থেকে এক মিলিমিটার ওপরে বলটি তালুবন্দী করেন। বেশ কঠিন ক্যাচ। ফিরে আসেন জয়ন্তীলাল। দিলীপ সারদেশাইয়ের ডবল সেঞ্চুরির ওপর ভর করে সেই ইনিংসে করে ৩৮৭। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস ২১৭ রানে শেষ হলে ওয়াদেকার ফলো অন করানোর সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বিপক্ষ অল আউট না হওয়ায় জয়ন্তীলাল আর সুযোগ পাননি ব্যাট করার। পরের টেস্টে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। পরিবর্তে সেই আরেক নতুন ওপেনারের অভিষেক হয়। তাঁর ব্যক্তিগত ১২ রানের মাথায় ব্যাটে লেগে বল সোবার্সের দিকেই উড়ে যায়। বেশ সোজা ক্যাচ, কিন্তু ধরতে না পারায় বেঁচে যান, আউট হন ৬৫-এ, পরের ইনিংসে ৬৭ অপরাজিত (ভারত ম্যাচ জেতে ৭ উইকেটে )। পরের টেস্টে ১১৬ ও অপরাজিত ৬৪। পরে ১ ও ১১৭, ১২৪ও ২২০। সিরিজে মোট ৭৭৪। তিনি টেস্ট জীবন শেষ করেন ১০১২২ রানে, ৩৪টি সেঞ্চুরি, নামের পাশে রেকর্ড, রেকর্ড আর রেকর্ড। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না, সেই সিরিজের আরেক ভারতীয় ওপেনারের নাম সুনীল গাভাসকার।পৃথিবীর ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁর অবদান সোনার অক্ষরে উজ্জ্বল। আর জয়ন্তীলাল হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অতলে। ১টি ম্যাচ, ১ ইনিংস, ৫ রান। এই তাঁর পরিসংখ্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে অজস্র রান করলেও দেশের হয়ে মাঠে নামার জন্য তাঁর নাম আর বিবেচিত হয়নি। জয়ন্তীলালের কঠিন ক্যাচ মিস করে সোবার্স যদি গাভাসকারের সহজ ক্যাচটি ধরতেন, জীবন কাকে যে কখন সুযোগ দেয়, কাকে দেয় না , কে যে জয়ন্তীলাল হয়ে রয়ে যাবেন আর কে হয়ে উঠবেন গাভাসকার!

*ছবি গুগল থেকে সংগৃহীত।