আঁচঃ এয়োনিয়ান অনির্বাণের ধারাবাহিক গদ্য

বাঙালি খতরেমে হ্যায়


অবশেষে বাঙালি উপলব্ধি করিল যে বাঙালি খতরে মে হ্যায়। একটা সময় ছিল যখন মনীষীরা তাহাদের স্তুতি করিয়া বলিতেন সে আজ যাহা ভাবে গোটা দেশ কাল তাহাই ভাবে। ইহাকি কম গৌরবের? ইহা কি কম বড় পিঠ চাপড়ানি? অথচ আজ ? আজ তাহার কী দুরবস্থা? বিহারী , মারওয়াড়ি , গুজরাটি , গোর্খা সবাই তাহারে লইয়া খিল্লি করিতেছে।সুযোগ পাইলেই তাহারে 'বাঙালি' বলিয়া অপমান করিতেছে। এমনকি যে কলিকাতা শহর যা কিনা তাহার একান্ত আপন সম্পদ ছিল। যাহার অলিতে গলিতে বাঙালিয়ানা ভরপুর ছিল। যাহার প্রতিটি সন্ধ্যায় বাঙালি পুরুষদের মনোরঞ্জনে অবাঙালি বাইজিরা শরীরী হিল্লোলে নৃত্য-গীত পরিবেশন করিত, বাঙালি প্রবাসে গেলে অবাঙালি কুলি তাহার বাক্স-প্যাটরা রেল গাড়ির কামরায় তুলিয়া দিয়া বখশিশ প্রার্থনা করিত,যাহার রন্ধনশালায় উড়ে পাচক তাহার হুকুম তামিল করিত, সাহেবরা যাহাদের সবার আগে সভ্য করিয়া তুলিতে পারিয়াছিলেন আজ সে উপলব্ধি করিল তাহার অতীত গৌরবের 'গাঁ' বাচক বিশেষ্যর 'মা' বাচক ক্রিয়া হইয়া গিয়াছে।

 সুতরাং কলিকাতা শহরের কোকবিলাসী মলসোহাগী বাঙালি স্থির করিল 'লড়কে লেঙ্গে বাংলা'!
এমনকি সাধের কফি হাউসেও নাকি বাংলার একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব হইয়াছে। ইহার চেয়ে বিষাদজনক আর কীই বা হইতে পারে। এই কফি হাউসে বসিয়া একদিন নিখিলেশ, মইদুল, ডিসুজা, বাংলার সংস্কৃতি দেবীর গালে ক্রিম ঘসিয়া ঘসিয়া তাহাকে গ্ল‍্যামারোজ্জ্বল করিয়া তুলিয়াছিল, অথচ আজ সেই কফি হাউসের এক বেয়ারা বলে কিনা "জারা হিন্দি মে বলিয়ে"!  কী ভাবিয়েছে ইহারা? বাংলার কালচারের মন্দিরকে এইভাবে অপবিত্র করা এই ম্লেচ্ছদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াইতে ডাক আসিল কলিকাতা শহরের বুদ্ধিজীবী গ্যাং-এর পক্ষ হইতে।

কিন্তু হায় মাঠ ঘাট বন পেরাইয়া সেই আহ্বান বাংলার গ্রামেগঞ্জে পৌঁছাইল না। ক্ষেতে-কিষান, কলে-মজুর জোট তো দূর অস্ত ;সেক্টর ফাইভ , অলিপাব, মায় প্রেসিডেন্সিও বিশেষ মুভ করিল না।

এইরূপ সিচুয়েশনে একটি ওষুধ ই সর্বোত্তম কাজ করে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ না হইলে পাণ্ডবরা আদৌ যুদ্ধ করিতে রাজি হইত কিনা তাহা ভাবিবার বিষয়। সুতরাং নারী-কেস চাই। বাঙালির ঝিমিয়ে পড়া পুরুষকার কে পুনরায় উত্থান ঘটাইতে সহসা আবিষ্কৃত হইল বাঙালি নারী কে অবাঙালি কিছু জীব অসম্মান করিয়াছে। যে বাঙালি নারী কে আমরা উত্তমকুমারের বাইকের পিছনে সপ্তপদী সিনেমায় গান গাইতে দেখিয়াছি, যে বাঙালি নারীকে কবিগুরু বলিয়াচেন "বাংলার বধূ বুকে তার মধু নয়নে নীরব ভাষা" , যে বাঙালি নারী স্মার্ট উত্তর-আধুনিক , যে বাঙালি নারী ব্যান্ডে গান গাহে, যে বাঙালি নারী প্রেসিতে, যাদবপুরে আধুনিকতা আর প্রগতিশীলতার প্রদীপ জ্বালাইয়া রাখে, তাকে । তাকে কিনা অপমান করিয়াছে 'গুঠকা খোর' 'ছাতু খোরের'  দল।

সুতরাং বদলা চাই। না না ,টিসিএস ইনফোসিস হলদিরাম, ইহাদের আমরা বাল উৎপাটন করিতে পারিবনা সেই সত্য উপলব্ধি করিয়া আপাতত ছোটো ছোটো টার্গেট গ্রহণ করা হইল। যথা: ট্রেনের অবাঙালি হকার, রকবাজ বাইকবাজ অবাঙালি ফুটো মস্তান, হোটেলের কর্মচারী, মেট্রো রেলের সিকিউরিটি গার্ড...।

ভুলিয়া গেলে চলিবেনা, বাঙালি বুদ্ধিজীবী মাত্রই বাবুরাম সাপুড়ে কবিতাটি পড়িয়াছেন, তদুপরি মোল্লা নাসিরউদ্দিন এর চাবি খোঁজার গল্প টিও। তাই বীরত্ব প্রদর্শনের অনায়াস স্ট্রাটেজি ইহাদের বিলক্ষণ জানা আছে।

কলিকাতা সন্নিবিষ্ট অঞ্চলের এক শ্রেণীর বাঙালির এই দূর্নিবার প্রয়াস কে লঘু করিয়া দেখিবার কোনো উপায় নাই। কলিকাতায়  বিনয়-বাদল-দীনেশ এর পর নকশালরাই যা একটু আধটু বোমাবাজি গুলি-বন্ধুক নাড়াঘাঁটা করিয়া বাঙালির ম্যাচো ফ্যান্টাসিকে উজ্জীবিত করিয়াছিল ।তারপর কলিকাতার বাঙালি বহুদিন যাবৎ  বিশেষ একটা একশন করে নাই। যদিও তাহার নাকের ডগায় ভাটপাড়া-নৈহাটি-কাকিনাড়া তে অবাঙালি সম্প্রদায় কালিপটকা জ্ঞানে বোমা পেটো ছোড়া ছুঁড়ি করিয়া থাকে !
কিন্তু তাহাতে কি আসে যায় ?
আমরা তো উত্তাল সমুদ্রে পাল তুলিয়া জাহাজ লইয়া পাড়ি দিচ্ছি না, ঘরের উঠোনে একটু কুমির ডাঙ্গা খেলিব মাত্র। ইহাতে ভাটপাড়া-কাকিনাড়া র যে সমস্ত দস্যু সকল খাঁটি গো-দুগ্ধ পান করিয়া রীতিমত শৃঙ্গধারী হইয়াছেন তাহারা নিশ্চই আমাদের  নিতম্বদেশ এর প্রতি ক্ষিপ্ত হইবেন না ,এই ভরসা আমাদের আছে।
সুতরাং , হে বাঙালি মাভৈ। একদান লুডো ই খেলা যাক।।

(ছবি : গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্র এর দৃশ্য, গুগল থেকে সংগৃহীত)

2 comments:

  1. দারুণ লেখা। ভাবায়। বাঙালিকে হয়তো মরিয়া প্রমাণ করিতে হ‌ইবে যে সে মরে নাই।

    ReplyDelete
  2. Khub sundar Lekha

    ReplyDelete

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com