গল্পঃ প্রদীপ সামন্ত





ব‍্যাঙ

আমাদের একটা পাসওয়ার্ড ছিল। দুজনের। সেটা হ'ল ব‍্যাঙ। আমরা যখন ইচ্ছে বৃষ্টি নামাতে পারি। মানে তখন পারতাম। এতদিন পরে ওই পাসওয়ার্ড কি আর কাজ করবে? কে জানে?


আজ হঠাৎ বর্ষার কথা মনে পড়লো। না, না। বর্ষাকালের কথা হচ্ছে না। বর্ষা মানে বর্ষা। আর আমি মেঘ। আরে বাবা, আমরা দুটি, যারা ইচ্ছে করলে বৃষ্টি নামাতে পারি। ভেসে যাবে চারদিক। আর কী ঝুপ্পুস অন্ধকার। কিছুই দেখা যাবে না। আমি বর্ষাকে আঁকড়ে ধরি আর বর্ষা আমাকে। সে ছিল এক দিন আমাদের!


ওহ্! নাম নিয়ে সমস‍্যায় পড়ে গেছো? ঠিকই। আমার বলে দেওয়া উচিত ছিল। আমি রঞ্জন আর ও পুষ্পিতা। ওর কাছে আমি হলাম মেঘ। আর আমার কাছে ও হয়ে গেল বর্ষা। এই হ'ল ব‍্যাপার!

দু'জনে একসঙ্গে কত কীই না করেছি! পাসওয়ার্ড বললাম। ও বলল। অমনি শুরু পাগল করা মেঘভাঙা বৃষ্টি। কখনো আমি দেরি করছি অথবা ভুল পাসওয়ার্ড বলি। তখন বৃষ্টি নামে। ওর দু'চোখ থেকে আষাঢ় নামে। শ্রাবণ নামে। তুমুল। আমি ওকে চুপ করতে বলি। ও পারে না। ও কাঁদতেই থাকে। কখনো ও পাসওয়ার্ড ভুলে যায়। আমি ঠিক বলি। তখনো বৃষ্টি হয় না। শুধু আমার গলার কাছে কী যেন আটকে থাকে সারাক্ষণ। আমার মুখ ভর্তি কালো করে আসা মেঘ। আমি তিষ্ঠোতে পারি না। 

একশো একটা ব‍্যাঙ গলার কাছে চলে আসে কোত্থেকে। তারা একসঙ্গে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কেউই বেরোতে পারে না। আমার চোখে আবার জল আসে না। কালো হয়ে যাই শুধু। বর্ষা কিছু করতে পারে না। আলো ফেলে না। বৃষ্টি আসে না। অদ্ভুত
 অবস্থা।

এই রকম করতে করতে আমরা কোথায় যে চলে গেলাম। পাসওয়ার্ড কি আর বেঁচে থাকে? মেঘ এখন বৃদ্ধ হয়েছে। বর্ষাও নির্ঘাত বৃদ্ধা! প্রায় তিরিশ বছর দেখা নেই আমাদের।

আজ নিস্তরঙ্গ সুখের সংসারে আবার ব‍্যাঙের আগমন। একটি ছোট্ট কিউট ব‍্যাঙ কীভাবে যেন আমাদের শোবার ঘরে ঢুকে এসেছে। আমি অনেক কায়দা করে ওকে মুঠোয় ভরে বাইরে বারান্দায় রেখে এসেছি।

ঘুম আসছে না। গলার কাছে কী যেন আটকে আছে। কষ্ট! গুমোট। বৃষ্টি আসছে না। কী করে আসবে পুষ্পিতা আমার দেওয়া বর্ষা নামটাই ভুলে গেছে এতদিনে। পাসওয়ার্ড তো কোথায় চলে গেছে! আর আমিও কী আর মেঘ আছি? কবেই তো রঞ্জন হয়ে উঠেছি!

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com