(এক)
কাঁসাই
কাঁসাইয়ের জলে স্নান তুমিও করোনি ঢের সাল
ঊষর নগরে বন্দি আমিও বনস্পতির ছিন্ন এক ডাল
কাঁসাই নদীর কূলে আমাদের বাসা মনে পড়ে?
আসন গাছের শিরে দুই চখা-চখি বসে ওড়ে
চোখাচখি হল যেই মনে পড়ে সেই অবগাহনের স্বাদ
উড়ে চলো সেই দেশে গূঢ় গাহনের শেষে কোথাও রেখো না কোনো খাদ
আমাদের বহ্নিস্নান
কাঁসাইয়ের জলে আজও নিত্য জায়মান
তোমার শরীর-মন কলঘরে গুনগুন করে সেই গান
কাঁসাইয়ের চরে গেঁথে আজও এক লাঙলের ফাল
গ্রীষ্মে ফেটে-পড়া মাঠে ঠা ঠা করে তোমার দুনিয়া-বেড়া জাল।
(দুই)
ক্ষুধার্ত
ক্ষুধার্ত শব্দের অর্থ জেনে গেছি জীবনের ভোরে
ক্ষুৎকাতর অস্ফুট কৈশোরে
যখন জিভের সব সদ্যোজাত স্বাদকোরকেরা দুর্নিবার
মিষ্ট-অম্ল-লবণাক্ত-কটু স্বাদ পেতে দুনিয়ার
চর্বচূষ্যলেহ্যপেয় পর্যাপ্ত ছিল না
সর্বত্র সন্ধানী দৃষ্টি খুঁজে ফেরে আহার্যের কণা
আজও তাই কোনো ক্ষুধার্তকে যদি হাতের নাগালে খুঁজে পাই
মনে হয়, পেট পুরে দু বেলা
খাওয়াই।
(তিন.)
কৃষকের মৃত্যু
সেনাবাহিনীর তালিকায় আমার নাম উঠল
ছিলাম মাঠ-দাপানো চাষি
ভূস্বামী হিসেবে গাল খেতে খেতে
ক্ষুদ্র কৃষকে পরিণত,তবু সম্পন্ন।
হঠাৎ একদিন ক্লিন্ন সৈন্যে পরিণত
কোনোদিন মরু দেখিনি
তাই ভয় পেলাম কেননা
যে-কোনো সময় গুলি ছুটে আসতে পারে
ভয় পেলাম, কেননা
লড়তে হবে সত্যের বিরুদ্ধেও
দৌড়ে পালাতে গেলাম,কিন্তু হায়
কাঁটাতারের নীচে অপেক্ষা করছিল মৃত্যু!
(চার)
শালবীজ
সার সার কচি শাল ফল
গাছের খাড়াই বেয়ে ওঠে
পাহাড়তলিতে সা-জোয়ান
মেষপাল ওই বুঝি ছোটে
কী এক পরম অন্বেষণে
উঠে গেছে অনন্তের দিকে।
কালক্রমে পাতারা শুকোবে
ডানায় রৌদ্রের গন্ধ মেখে
বৈশাখীর ঝড়ে পাখা মেলে
বীজেরা আকাশ ঢেকে দেবে
মাটির জঠরে প্রত্যাবৃত্ত
হতে কালবৈশাখীর শেষে।
(পাঁচ)
কী করে ঘুমাই
ঘুমিয়ে পড়তে বলো,কী করে ঘুমাই?
চোখ বুজলেই দু চোখে যে মুখ ভাসে
সে-মুখ তোমার
যে-বুকের প্রতিধ্বনি এই বুকে বাজে
সে-বুক তোমার
প্রতিধ্বনি পাবো কি আত্মায়
সে-রুহের, যার মহীরুহ
হয়ে ফুল্লকুসুমিত তোমার শরীর?
(ছয়)
গূঢ় সংগোপন
তারাদের খুরের আওয়াজ
কোনোদিন তুমি শুনেছ কি?
চোখ মেলে দেখেছ কখনো
নদীচরে চরে চখাচখি
বৃষ্টি থেকে ফোঁটা ফোঁটা প্রাণ
গাছগুলি কুড়োয় যেমন
প্রেমের মোহন কলি ফোটে
হৃদিবৃন্তে গূঢ় সংগোপন।