রাইজ লাইক এ লায়ন আফটার এ স্লামবার... স্পার্টাকাস হাঁটছিল... হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল; রাইজ লাইক এ লায়ন আফটার এ স্লামবার ইন আনভ্যাংকুইসেবল নাম্বার। ...স্পার্টাকাস হাঁটছিল, আরো হাজার মানুষ হাঁটছিল...। স্পার্টাকাস হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল, আরো হাজার হাজার মানুষ হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল আরো হাজার টু দি পাওয়ার হাজার রকমের ভাবনা। মজুরি কমে গিয়েছিল অনেক। সপ্তাহে মাত্র পাঁচ ছয় সিলিং জুটছিল কাপড় কলের শ্রমিকদের। ভারতীয় রেল নাকি তিন লক্ষ লোক ছাঁটাই করেছিল। ঝাঁপ ফেলছিল একের পর এক কারখানা। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল চাষের খরচ। চাষিরা ফলিডল খেয়ে মারছিল, মরে পড়ে থাকছিল মুখ গুঁজে, মেঠো ইঁদুরের মত। বড় বড় বেনিয়ারা ব্যংক থেকে টাকা মেরে চম্পট দিচ্ছিল। যুদ্ধ পরবর্তী এক তীব্র মন্দা দেখা দিয়েছিল। যুদ্ধ আর মন্দার অজুহাতে সব ইন্ডাস্ট্রিতেই চলছিল ডাউন সাইজিং। যুদ্ধ আর মন্দার অজুহাতে মানুষদের খুন করা হচ্ছিল, মেয়েদের ধর্ষণ করে খুন করা হচ্ছিল। যুদ্ধ আর মন্দার অজুহাতে কড়া 'ইউ এ পি এ' আইন চালু হয়েছিল । যুদ্ধ আর মন্দার অজুহাতে কড়া 'রাওলাট আইন' চালু হয়েছিল। যুদ্ধ আর মন্দার অজুহাতে কড়া 'সিক্স এক্ট' চালু করা হয়েছিল। স্পার্টাকাস হাঁটছিল। সঙ্গে হাজার হাজার মানুষ হাঁটছিল। স্পার্টাকাস ভাবছিল। ...
"রাইজ লাইক এ লায়ন আফটার এ স্লামবার
ইন আনভ্যাংকুইসেবল নাম্বার,
শেক ইউর চেইনস অন আর্থ লাইক ডিউ
হুইচ ইন স্লিপ হ্যাড ফলেন অন ইউ
ইউ আর মেনি দে আর ফিউ!"
যখন বৈশাখী উৎসবের দিন জালিয়ানওয়ালাবাগে জমায়েত হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ রাওলাট আইন বাতিলের দাবিতে, যখন হান্ট (হান্ট দি ওরেটর) এর বক্তৃতা শুনতে মানুষ উপেক্ষা করেছিল শাসকের রক্তচক্ষু, আর হান্ট যখন দাবি করেছিলেন সম কাজে সম মজুরি চাই...সবার সমান গণতান্ত্রিক অধিকার চাই, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার চাই, নারীদের সমান অধিকার চাই, ইউ এ পি এ এক্ট বাতিল চাই...তখন জেনারেল ও ডায়ারের নির্দেশে মেশিন গানগুলো গর্জে উঠেছিল। ছোঁড়া হয়েছিল পয়জনাস ফসফিন গ্যাস এর সেল। যাতে মানুষ কিছু দিন পরে মারা যায়। ক্যাজুয়ালিটির সংখ্যাটা কম দেখানো যায়। স্নাইপার ভাড়া করে আনা হয়েছিল তুতিকোরিন থেকে, যারা ভিড়ের মধ্যে বিদ্রোহী নেতাগুলোকে শুট করেছিল ছিল নিদারুন নিপুণতায় । এই স্নাইপার নিয়ে একটি দেশপ্রেমী বলিউড সিনেমাও বানানো হয়েছিল। সমস্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল, মিডিয়াকে পোষ মানানো হয়েছিল, বিদ্বজনদের কিনে নেওয়া হয়েছিল।
জমায়েত এর আবেদন পাওয়া মাত্র পুলিশ কর্তা এবং পুলিশ মন্ত্রী মৃদু হেসেছিলেন। কাল বিলম্ব না করে অনুমতি দিয়েছিলেন। জমায়েতের আগের দিন পুলিশদের নির্দেশ দেওয়া হয়ে ছিল বর্শাগুলোকে শান দেওয়ার জন্য। এসব আগামী দু হাজার উনিশ সালে ঘটেছিল। এসব বিগত উনিশশো উনিশ সালে ঘটেছিল। এসব বিগত আঠারোশো উনিশ সালে ঘটেছিল। ...এসব বিগত দুহাজার উনিশ, আগামী উনিশশো উনিশ, আগামী আঠারোশো উনিশ সালে ঘটেছিল। এসব আগামী উনিশশো উনিশ, বিগত আঠারোশো উনিশ... দুহাজার, উনিশশো, আঠারোশো... ইউ এ পি এ, রাওলাট, সিক্স এক্ট, ....শ্রমিক ছাঁটাই, চাষির আত্মহত্যা, নারীদের ধর্ষিতা হওয়া... যুদ্ধ-মন্দা-ছাঁটাই-হত্যা... বর্শা-মেশিনগান-স্নাইপার-গ্যাস... শোক-ক্ষোভ-বিক্ষোভ... যদি আপনাকে ভাবিয়ে থাকে তাহলে শুধু ভাবলেই ভাবনা শেষ হয়ে যায়না। আপনার মত হাজার হাজার লোক যদি হাজার টু দি পাওয়ার হাজার বার ভেবে থাকেন তাহলে তা আর শুধু ভাবনা থাকেনা। সেই ভাবনা কোনসলিডেটেড হয়ে লাভার মত নেমে আসে রাস্তায়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় এদিকে ওদিকে ...সেই তরল ভাবনার স্রোত আপনার মস্তিস্ক থেকে আপনার মত হাজার হাজার মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে এসে আপনার বাড়ির সামনের নর্দমা, হাই ড্রেন হয়ে নদীর মত বয়ে চলে জালিয়ানওয়ালাবাগ বা সেন্টপিটারস ফিল্ড এর দিকে। স্পার্টাকাস সেই ভাবনাগুলোকে দিয়ে অক্ষর বানায়। ছোটো বড়ো নানান সাইজের অক্ষর। অক্ষর দিয়ে তৈরি হয় শব্দ। সেই শব্দ ছুঁড়ে মারে অত্যাচারীর মুখে। হাজার হাজার হাজার অক্ষর, হাজার হাজার শব্দ আর হাজার হাজার মানুষ।
"কেমন সেই মানুষ? নিষ্পাপ মানুষ, অলৌকিক মানুষ, মজবুত মানুষ হারামী অর্থনীতির এক নির্মোহ পেষাই কলে কখনো ফেরার, কখনো অসুস্থ, কোথাও কৌটো নাড়ছে, কখনো আত্মঘাতী , কোথাও গ্রেফতার, কোথাও বোবা কখনো রক্ত বেচে, কখনো লাফিয়ে পড়ে, কখনো টুঁটি কামড়ে..."
সময় যদি একটা ডাইমেনশন হয়, তাহলে সেই ডাইমেনশন বরাবর হেঁটে চলা খুবই সম্ভব। হেঁটেচলা সম্ভব অতীতে ভবিষ্যতে বর্তমানে। স্পর্টকাস হাঁটছিল, হাঁটছে, হাঁটবে। স্পর্টকাস হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল আঠারোশ আঠারো সালে সেেলির লেখা 'মাস্ক অব অনার্কি'র লাইন গুলো। জেনারেল ও ডায়ার ও প্রস্তুত। আর আপনি এখনো ভাবছেন যে জালিয়ানওয়ালাবাগ একবারই ঘটেছিল ?
* ছবি গুগল থেকে সংগৃহীত
ধন্যবাদ। চালিয়ে যাও।
ReplyDeleteDhanybad
Deleteদারুণ লেখা। দুর্বার গতি অব্যাহত রয়েছে।
ReplyDeleteদুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে স্পার্টাকাস। একে রোখে সাধ্য কার?
ReplyDeleteDhanyabad
Deleteখুব ভাল সম্পাদকীয়
ReplyDeleteDhanyabad
Deleteবাহ
ReplyDeleteদারুণ
ReplyDeleteসময়োপযোগী।
ReplyDeleteBesh valo laglo. Valo lekha.
ReplyDelete