বঙ্গে বিলাতি ভূতঃ দেবরাজ ভট্টাচার্য



দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম পর্বের লিংকঃ     https://spartakasmagazine.blogspot.com/p/blog-page_1.html

[আগে যা ঘটেছে – ঝন্টু দাস পলিসি বেঁচে খায়। বিয়ে হয় নি, একলা মানুষ। হটাত দেখা গেল নানান বিলেতের বিখ্যাত ভূতেরা তার সাথে কথা বলতে আগ্রহী। তারা তাকে নিজেদের মনের কথা জানাতে ব্যাকুল। লেনিন থেকে মার্ক্স, ম্যালথাস থেকে এডমান্ড বার্ক, এমন কি আন্তোনিও গ্রামসচ্চি তার সাথে গল্প করতে আগ্রহী। ভূতেদের মধ্যে নানান বিতর্ক, মারামারি। বাকুনিন চাইছে মার্ক্সকে এক হাত দেখে নিতে। সব মিলিয়ে ঝন্টু দাসের জীবন হটাত করে রঙিন হয়ে উঠেছে।]

“আরে ঝন্টু, চলো একটু ফুর্তি করা যাক। ওয়াইন চলবে তো?”
বার্ক সাহেব আমাকে দেখে হটাত এই কথা বলে বসবেন সেটা আমি আশা করি নি। লোকটি আমাকে খুব পছন্দ করেছিল বলে তো মনে হয় না। তাহলে এত ফুর্তি কিসের? কিন্তু বিদেশী মাল, মানে ওয়াইন, খাবার লোভ সামলানো মুশকিল। নিজের রোজগারে তো আর এই সব পেটে ঢোকানো সম্ভব ন!
আমি বললাম, “আরিব্বাস, দারুণ ব্যাপার। কোথায় বসবেন স্যার?”
বার্ক সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন তার বাড়িতে, বাগবাজারের কাছে। জ্ঞ্যানী লোক বোঝা যাচ্ছে। প্রচুর বইপত্র।
“এই বইটা কি আপনার লেখা নাকি স্যার?” একটা বই দেখে আমি জিজ্ঞাসা করলাম। ফরাসী বিপ্লব নিয়ে নোটবই বলে মনে হলো।

“হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো। ওটার জন্যই আমাকে এখনো লোকে মনে রেখেছে আর কি।"
আমি বললাম, “হিস্ট্রির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নোটবই মনে হচ্ছে স্যার, প্রচুর বিক্রি নিশ্চই।"
বার্ক সাহেব পেট ফুলিয়ে হাসতে লাগলেন হো হো করে। বললেন, “ঝন্টু, তুমি জিনিয়াস।"
আমি বললাম, “না মানে স্যার, ইতিহাসের বই তো ওই আই এ এস, বি সি এস পরীক্ষার জন্যই কাজে লাগে। কেউ কেউ অবশ্য প্রাইমারী স্কুলে পড়ানোর জন্যও পড়ে। টেট পরীক্ষা। খুব কঠিন পরীক্ষা স্যার। আপনি পাশ করতে পারবেন?

বার্ক সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবে নিয়ে বললেন, “মনে হয় না। যাই হোক, বোতলটা খোলা যাক কি বল?”
আমি বললাম, “তা তো বটেই, শুভ কাজে দেরী কেন স্যার?”
বেশ কায়দা করে বার্ক সাহেব দেখলাম বোতলটি খুললেন। তারপর দুটি বিশেষ রকম গেলাসে দেখলাম ওয়াইনটা ঢাললেন। বুঝলাম এ হচ্ছে যাকে বলে ওয়াইন গেলাস। তিনি আমার দিকে একটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,”আজ শুভদিন, তাই এসো আমরা এই দুষ্প্রাপ্য ওয়াইনটা দিয়ে সেলিব্রেট করি।“
আমি এক চুমুক খেয়ে দেখলাম যে মালটা টপ। সাহেব মেমদের ব্যাপার-স্যাপার অন্য লেভেল। দু’বার চুমুক মারতেই দেখলাম মনটা কেমন ফুরফুরিয়ে উঠলো। পলিসি ব্যাচার টার্গেট মাথা থেকে হাওয়া হয়ে গেলো। মনে হল সুন্দরী মেমেদের মাঝখানে বসে আছি আর সামনে নীল সমুদ্র।

বার্ক সাহেব বললেন, “কেমন লাগছে?”
আমি বললাম”উফ স্যার, কি যে বলি। কিন্তু শুভদিনটা কিসের বুঝলাম না তো?”
বার্ক সাহেব বললেন, “ও হো, আসল কথাটাই তো বলা হয় নি। আরে তোমার বন্ধু, সেই আন্তোনিও গ্রামচ্চি। সেই যে তোমাকে বলল যে আসলি সাবল্টার্ণ পেয়ে গেছে, কুকুর আর কাক নিয়ে বিপ্লব করবে...”
আমার হটাত মনে পড়ে গেল। চীনা পাড়ায় দেখা হয়েছিল। তারপর বাইপাসের ধারে দেখিয়েছিলেন আমাকে হাজার হাজার কুকুর আর কাক বিপ্লবের জন্য তৈরি। ছোটখাটো চেহারা কিন্তু ভারী সুন্দর রোমান্টিক মুখখানি। মেধাবী মেয়েরা দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে টাইপ।

আমি বললাম, "তা ওনার বিপ্লব কি হয়ে গেল?”
বার্ক সাহেব হেসে বললেন, “আরে না না, বিপ্লব হলে আমি ওয়াইন কেন খাবো? আমি তো বিপ্লব বিরোধী।“
আমি এবার একটু চিন্তিত হলাম। বললাম, “তাহলে সেই আন্তোনিও সাহেব এখন কোথায় স্যার?”
বার্ক সাহেব বললেন, “কোথায় আবার, জেলে!যার যেখানে জায়গা"।

আমি খাবি খেয়ে বললাম, "সে কি, ওর তো রোগা পটকা চেহারা। মার দিলে তো মরে যাবে স্যার।"
বার্ক সাহেব গেলাসে চুমুক দিয়ে বললেন, “আরে না না, ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বসে বসে লেখা লেখি করবে। ভাল ছেলে, চিন্তা-ভাবনাটা একটু গন্ডোগোলের। এই আর কি।"
আমার তাও গোটা ব্যাপারটা খুব অবাক লাগছিলো। আমি বললাম, "কিন্তু স্যার, সেই নেড়ী কুকুরগুলোর কি হল? ঘেউ ঘেউ করে বিপ্লব করার জন্য যারা রেডী হয়ে ছিল?

বার্ক সাহেব হো হো করে হাসতে লাগলো। বললেন,”বলি নি বুঝি? আরে নেড়ীগুলোকে বললাম, বিউটি কন্টেস্ট হচ্ছে। টি ভি তে দেখানো হবে। যে জিতবে তার সাথে ডোবারম্যানের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। তাতেই মাথা থেকে বিপ্লব হাওয়া। আর কাকগুলোকে বললাম, সারা দুনিয়া তোমাদের দুচ্ছাই করে, আমি তোমাদের ময়ূরের সম্মান দেবো। ব্যাস, কেল্লা ফতে। বিপ্লব মাঠে মারা গেলো"।

আমি ভাবলাম এ কি ডেঞ্জার মাল মাইরি। আমি তাও জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা স্যার, আপনি বিপ্লব বিরোধী কেন?”
বার্ক সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, “এই ওয়াইনটা দেখেছো? হাজার বছর ধরে মাটি তৈরী হয়েছে, সেই মাটিতে আঙুর ফল, সেই থেকে চিরাচরিত পদ্ধতিতে এই ওয়াইন তৈরী হচ্ছে। হটাত করে সব ভেঙ্গে তছনছ করে দিলে চলবে?ট্র্যাডিশনের কোনো মূল্য নেই?”

আমি দেখলাম এইবার কেটে পড়াই ভাল। মাল তো খাওয়া হয়েই গেছে।
বেড়িয়ে মেট্রোর দিকে এগোচ্ছি, হটাত এক মেমসাহেবের গলা – “একটা সিগারেট হবে?”
আমি দেখলাম মেমসাহেবকে মিষ্টি দেখতে। চোখ দুটি জ্বল জ্বল করছে। বেশ একটা ঘ্যামা ব্যাপার আছে সাজে পোশাকে। আমি বললাম, “ম্যাডাম, মানে, সিল্ক কাট চলবে?” ম্যাডাম হেসে বললেন, “আপনি তো ঝন্টু দাস, দি সেলিব্রিটি?” আমি বললাম, “ম্যাডাম কি যে বলেন। “মেমসাহেব হেসে বললেন, “তোমার সাথে সিগারেট খাচ্ছি এটা বাবা-মাকে বোলো না কিন্তু”।

আমি বললাম, “মানে আপনার বাবা-মাকে আমি তো চিনি না।"
ম্যাডাম জিভ কেটে বললেন, “ও সরি, হাউ সিলি অফ মি। আমি এলানর, এলানর মার্ক্স। কার্ল মার্ক্সের মেয়ে। সুইসাইড করেছিলাম এক কালে।"
আমি বললাম, “আরে তাই নাকি? দেখো দেখি, আমি চিনতেই পারিনি। তা আমি কি তোমাকে এলা বলে ডাকতে পারি?”
এলানর সিল্ক কাট-এ আগুনটা দিয়ে বলল, “মাই প্লেসার, মিস্টার ঝন্টু”।

4 comments:

  1. Khub bhalo laglo

    ReplyDelete
  2. Tabe pratham parbota aaro bhalo chhilo...byaktigato mat

    ReplyDelete
  3. Aar kono parbo aasbe ei series er?

    ReplyDelete
  4. Saral bhabe kathin bishay aalochona...bhalo laglo

    ReplyDelete

যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ spartakasmagazine@gmail.com