সাম্রাজ্য ও অন্যায়ের মনস্তত্ত্ব: জালিয়ানওয়ালাবাগ, ১৯১৯
ভারতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের দমন-পীড়নের নির্লজ্জ হৃদয়হীনতার প্রকাশ যে কয়েকটি ঘটনার মধ্য প্রত্যক্ষ করা গেছিল নিঃসন্দেহে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড (১৯১৯) তার মধ্য কুখ্যাততম। সাধারণ ভাবে জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম বিশ্বেযুদ্ধোত্তর যুগে সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ সরকার যে সার্বিক দমন নীতির আশ্রয় নিয়েছিল, তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতব্যাপী যে গণ আন্দোলনের প্রবণতাটি বেড়ে উঠছিল, তার অন্যতম চূড়ান্ত প্রকাশটি দেখা গেল পাঞ্জাবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের মতামতের তোয়াক্কা না করে ইংল্যান্ড ভারতকে যুদ্ধরত দেশ বলে যুদ্ধের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছিল, একদিকে বিপুল ভারতীয় সম্পদ ও অন্যদিকে লোকবলকে তারা একতরফা ব্যবহার করে। এর বিনিময়ে ভারতীয়দের আশা ছিল, যুদ্ধান্তে শাসনব্যবস্থায় তাদের অংশীদারীত্ব বাড়ানো হবে, বলা বাহুল্য সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ শক্তি সে পথে হাঁটেনি, স্বভাবতই দেশ জুড়ে অশান্তির বাতাবরণ তৈরী হয়। এ থেকে সাম্রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য “দ্য আ্যনার্কিক্যাল এ্যান্ড রেভলিউশনারী ক্রাইমস এ্যাক্ট”, ১৯১৯ পাশ করা হয়। সাধারণ্যে এই আইন তার জনক স্যার সিডনি রাউলাটের নামে ‘রাউলাট আইন' বলে পরিচিত। এই কালা কানুনটি তে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ, বিনা বিচারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্দী করা, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকলে জুরী বিহীন রুদ্ধদ্বার কক্ষে বিচার ও শাস্তিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়। এর প্রতিবাদে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেশ জুড়ে একটা প্রতিবাদের আবহ তৈরী হয়, ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মহাত্মা গান্ধী ভারতবর্ষে ফিরে সত্যগ্রহ আন্দোলনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা শুরু করেছিলেন। তিনি ২৪ শে মার্চ, ১৯১৯, বোম্বাই-এ একটি প্রতিবাদ সভাতে দেশজুড়ে ৬ এপ্রিল থেকে রাউলাট সত্যাগ্রহের ডাক দেন। এই সূত্রে দেশজুড়ে একটা গণ আন্দোলনের জোয়ার ভারতের কমবেশি সমস্ত বড় শহরে ও অন্যত্র শুরু হয়। উল্টোদিকে আন্দোলনের এই প্রাবল্য রোধের জন্য বৃটিশ সরকার রাউলাট আইনকেই হাতিয়ার করে। জাতীয় ও জনপ্রিয় নেতাদের গ্রেফতার, পুলিশি হামলা ও অত্যাচার চলতে থাকে। যে কোন সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এর অনুসঙ্গে ১৯১৯-এর ১৩-ই এপ্রিল শান্তিপূর্ণ একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় পাঞ্জাবের অমৃতসরে জালিয়ানওয়ালাবাগ ময়দানে। প্রতিবাদ সভা, বৈশাখী পূর্ণিমা ও পশু কেনাবেচার হাটের জনতা প্রায় একত্রে এখানে উপস্থিত হওয়ায় সমবেত জনতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল কমবেশি প্রায় কুড়ি হাজার। সম্ভাব্য শান্তি ভঙ্গের আশংকায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজিন্যাল্ড ডায়ারের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি সেনাদল এখানে মজুত করা হয়েছিল প্রশাসনের নির্দেশে; বিকেল পাচটা নাগাদ এই মাঠের একমাত্র গেটটি আটকে দিয়ে ডায়ারের নির্দেশে ১৬৫০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। পরিণতিতে সরকারী হিসেবেই ৩৭৯ জন মারা যান এবং ১২০০ মানুষ আহত হন। বলা বাহুল্য বেসরকারী সমস্ত সূত্রই এই সংখ্যাটাকে অনেক বেশি বলে মনে করে।
দেশবাসী এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। এ.জে.পি. টেলর সঙ্গত ভাবে বলেছেন, এটা ছিল সেই চূড়ান্ত মূহুর্তের সূত্রপাত, যখন ভারতীয়রা নিজেদের বৃটিশ শাসন ব্যবস্থার থেকে বিচ্যুত করে নিল (১)। সারা ভারতে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। বাংলাতে এর প্রতিবাদেই রবীন্দ্রনাথ তার নাইট উপাধি ত্যাগ করছিলেন, এই সর্বজ্ঞাত সত্যগুলি আমরা কমবেশি জানি। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্যবাদের যুগে তার নিষ্ঠুরতা, যাবতীয় অন্যায় ও বৈষম্যমূলক কাজকর্মকে নৈতিক প্রতিষ্ঠা দেওয়ার লক্ষ্যে নানাবিধ তত্ত্বের আমদানী করেছিল, তাও আমাদের অজানা নয়। বস্তুত বিশ্বজুড়ে রাজনীতির কারবারীদের এটা একটা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি। মিলের উপযোগীতাবাদ, কিপলিঙ এর হোয়াইট মেনস্ বার্ডেন তত্ত্ব অথবা জোনস বা উইলবারফোর্সদের প্রচারিত ইভানজেলিক্যালিজম এর হাত ধরে বৃটিশদের ক্ষেত্রে এই নৈতিক ভিত্তিভূমি প্রতিষ্ঠার কাজটি সাম্রাজ্যের একেবারে প্রথমদিন থেকে কার্যকরী ছিল। সোজা কথায় অন্যায়কে অন্যায় না বলে, কাজটির একটি গ্রহণযোগ্যতার জায়গা প্রস্তুত করা, জালিয়ানওয়ালাবাগ ঘটনার পরে এমনটা না হবার কোন কারণ ছিল না নিশ্চিতভাবেই, এই সূত্রেই প্রতিবাদ এবং নিন্দার একটা ঝড় উঠলো ভারতে এবং খোদ লন্ডনে। আমাদের বর্তমান আলোচনার পরিধিতে এগুলির একটা রূপরেখা আমরা তৈরীর চেষ্টা করবো।
কোন সন্দেহ নেই, বৃটিশ বর্বরতা প্রায়শই ভারত সহ তাদের কলোনী গুলোতে জাতীয়তাবাদের প্রসার বন্ধ করতে অস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহারে বিশেষ ব্যুৎপত্তি দেখিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে নীরস্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ জনতার ওপর এত বড় সশস্ত্র আক্রমণ ইংল্যান্ডে বা তার কলোনীগুলোতে আগে কখনই হয়নি, এবং মৃতের সংখ্যার বিচারেও এর সঙ্গে তুলনীয় আর কোথায়ই কিছু দেখা যায়নি। পিটারলুর মতো নারকীয় ঘটনাতেও মৃতের সংখ্যা ছিল মেরেকেটে এগারো, আহত পাঁচশোর মতো। পরবর্তী নাজি গণহত্যাগুলি নারকীয়তার বিচারে এর থেকে বেশি হলেও, যেমন লিডাইস্ অবরোধের মতো ঘটনাগুলি যে রকম সংগঠিত পরিকল্পনার অঙ্গ ছিল, সেই ধরণের কোন পূর্ব পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি জালিয়ানওয়ালাবাগের ক্ষেত্রে বৃটিশদের ছিল না (২)। ভারতীয় প্রেক্ষিতে সিপাহী বিদ্রোহ দমনে বৃটিশ নিষ্ঠুরতা বা ১৮৭২-এ পাঞ্জাবে কুকা বিদ্রোহীদের পয়ষট্টি জনকে একসঙ্গে কামনের মুখে উড়িয়ে দেওয়া চূড়ান্ত বৃটিশ দমন নীতির স্বাক্ষ্য বহন করলেও এগুলির পেছনে সরকারী আদেশ ও প্রয়োজনীতার একটা স্পষ্ট পটভূমি ছিল। সেই অর্থে বললে ভুল হয়না যে, এই পদক্ষেপটি আদতে ডায়ারের একক দায়িত্ব প্রণোদিত, যা কার্যত হয়ে উঠলো বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিপথগামী নারকীয়তার চূড়ান্ত উদাহরণ। খুবই সঙ্গত যে চার্চিলের মতো কট্টর সাম্রাজ্যবাদী বা হারবার্ট এ্যসকুইথ-এর মতো প্রাজ্ঞ রাজনীতিজ্ঞ ঘটনাটিকে কখনো “অস্বাভাবিক বা অসঙ্গত” অথবা “সমগ্র বৃটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম নিদারুণ ঘটনা, যার কোন জোড়া সমগ্র এংলো-ভারতীয় ইতিহাসে অনুপস্থিত”, এমত নানা বিশেষণে ভূষিত করেছেন (৩)। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বৃটিশদের তরফে এর একটা গ্রহণযোগ্য বয়ান তৈরীর সর্বৈব প্রচেষ্টার সূত্রপাতও হল, যে ভাষ্যে এই রকমটা বলার চেষ্টা হল, জালিয়ানওয়ালাবাগ একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা মাত্র, এটা ডায়ারের একক দায়িত্বে সংঘটিত এবং ডায়ারের এই দায়িত্বকেও লঘু করে দেখানোর একটা প্রচেষ্টা সমান্তরালে চালিয়ে যাওয়া হল, এমনকি এমন তত্ত্বও উঠে এলো গুলি চালানোর সিদ্ধান্তটি ডায়ারের আর্টেরিও স্কেলেরোসিস অসুখের কারণে বিড়ন্বিত একটি সিদ্ধান্ত (৪) অর্থাৎ সিদ্ধান্তটি তিনি সুস্থ অবস্থায় থাকলে কখনোই নিতেন না।
কেউ কেউ এমনকি ডায়ার যেভাবে ঘটনার অন্তে নিজেকে “সেভিয়ার অব দি পাঞ্জাব” বলে বিজ্ঞাপিত করলেন, তারও সমর্থনে এগিয়ে এলেন। ডায়ারের সমর্থনে বৃটিশ ঐতিহাসিক বা প্রশাসকদের মধ্যে এটাকে লজিক্যাল প্রমাণ করার প্রক্রিয়াটির বিকল্পে বলাই বাহুল্য একটা অন্য স্বরও বেড়ে উঠলো ভারত ও ইংল্যান্ডে। গান্ধী তো সঠিকভাবেই বুঝলেন, ডায়ার কে দোষী সাব্যস্ত করা বা তার শাস্তি বিধান করা কোন সমাধানই নয়, বরং সেই ব্যবস্থাটাই পাল্টাতে হবে যে ব্যবস্থা ডায়ারদের সৃষ্টি করে (৫)। রাজা রাম বা ভি. এন. দত্তা অথবা মার্কিন সমাজতাত্ত্বিক হেলেন ফেন প্রত্যেকেই ঘটনাটির পেছনে আমলাতন্ত্রের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা অথবা সাম্রাজ্যবাদী নিপীড়ন-মানসিকতার স্পষ্ট অঙ্গুলী হেলন দেখেছেন (৬)। শ্রমিক দলের নেতা র্যমসে ম্যকডোনাল্ড তো পরিস্কার ভাবেই এর মধ্য প্রশাসনিক ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রকাশ লক্ষ্য করেছিলেন; আর এক শ্রমিক নেতা বেন স্পুরও ঘটনাটিকে কোন ‘একক ব্যতিক্রমী’ বলে মানতে রাজী হননি (৭)। বোম্বাই ক্রনিক্যালের সম্পাদক বেজ্ঞামিন গাই হর্ণিম্যান পাঞ্জাব বিশৃঙ্খলার জন্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন; এজন্য এমনকি তাকে ভারত ছাড়তে হয়েছিল। বৃটিশ সরকার যখন বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য হান্টার কমিশন গঠন করলো, তখন কোথাও একটা এই স্বীকৃতিও ছিল, যে, বিষয়টি নেহাৎই ব্যাতিক্রমী বা একক কোন ঘটনা নয়। বস্তুত প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুগে আর্থিক সংকট, বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ অথচ তা বাবদ যথাযথ স্বীকৃতির অভাব কিংবা মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কারের ব্যর্থতা এসবই ভারতকে একটা আগ্নেয়গিরির ওপর বসিয়ে দেয়, গান্ধীর নতুন ধরণের রাজনীতি এই পটভূমিটাকে বিপ্লবীয়ানার আরও অনুকূল করে তুলেছিল। সরকার আন্দোলনের গণ-মুখটির বিস্ফোরণের সম্ভাবনাটিকে ধরতে পারে, তারই পরিণতি দেশ জুড়ে দমন-নিপীড়নের প্রকাশ, যার চূড়ান্ত রূপটি রাউলাট আইন জারী বা পাঞ্জাব অন্যায়ে দেখা গেল। জালিয়ানওয়ালাবাগের দুই তথাকথিত কারিগর পাঞ্জাবের লেফেটেন্যান্ট গভর্ণর মাইকেল ও-ডায়ার এবং সেনাকর্তা জেনারেল ডায়ার উভয়েই সাম্রাজ্য রক্ষায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। এদের স্পষ্ট ধারণা ছিল, ভারতের কল্যাণের জন্যই ভারতের ওপর বৃটিশ কতৃত্ব নিরঙ্কুশ হওয়া দরকার। পাঞ্জাবের শাসক রূপে ও-ডায়ার বিশ্বযুদ্ধে পাঞ্জাবীদের সেনাদলে নিয়োগের প্রশ্নে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করেছিলেন, যা পাঞ্জাবীরা মোটেই ভালোভাবে নেয়নি; ভারত থেকে নিযুক্ত সেনাদের শতকরা ষাট জন ছিলেন পাঞ্জাবের, অথচ পাঞ্জাবীরা ছিলেন সমগ্র ভারতীয় জনসংখ্যার মাত্র ৭.৫ শতাংশ। হান্টার কমিটি অবশ্য পাঞ্জাব অশান্তির পেছনে সামরিক পদে নিয়োগের এই বাড়াবাড়ির তত্ত্বটি মানেন নি; যদিও পরবর্তী গবেষণা এই সত্যর সপক্ষে (৮) । স্যার ও-ডায়ার মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কারের বিরোধীতা যেমন করেছিলেন, তেমনই বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কঠোর হস্তে দমন করতে উদ্যেগী হয়েছিলেন গদর আন্দোলনকে। একই ভাবে রাউলাট সত্যাগ্রহের সময় সত্যাগ্রহীদের কোমর ভেঙ্গে দেওয়ার লক্ষ্যে পাঞ্জাবের শান্তিপূর্ণ হরতাল ও সমাবেশগুলি তার আক্রোশের লক্ষ্য হয়ে ওঠে। সত্যপাল ও কিচলুকে সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় গ্রেফতার (৯ এপ্রিল, ১৯১৯) ইত্যাদী সবই তার স্বাক্ষ্য বহন করে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে গান্ধীকেও গ্রেফতার করা হল। ১০ এপ্রিল একদিকে পাঞ্জাবে সত্যপাল ও কিচলু, অন্যদিকে গান্ধীর গ্রেফতার সারা ভারতেই অশান্তির বাতাবরণ ঘন করে তোলে। অমৃতসরে জনতা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে নামে। এই ঘটনা পর্যন্ত জনতা কিন্তু শান্তিভঙ্গের দিকে হাটেনি। সিভিল লাইনের দিকে তাদের যাত্রা মোটের ওপর শান্তিপূর্ণই ছিল, শুধু ইট-পাটকেল ছোড়ার কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া। অথচ পুলিশও এই দিনও গুলি চালায়, এগারো জন প্রতিবাদী নিহত হত, এই সূত্রেই জনতা উন্মত্ত হয়ে ওঠে। পাঁচজন ইওরোপীয়ের মৃত্যু ও সিটি মিশন স্কুলের ম্যানেজার মিস শেরউডের ওপর হামলা এবং বেশ কতকগুলি সরকারী ভবন লুটপাট ও জ্বালানো হয়। মিস শেরউডের ঘটনাটিকে মহিলাদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ রূপে দেখিয়ে বৃটিশ প্রশাসন বিদ্রোহীদের প্রতিকূলে জনমত সংগঠিত করতে চেয়েছিল; বস্তুত এটা হয়েছিল ডায়ারের কুখ্যাত জালিয়ানওয়ালাবাগ আচরণের যৌক্তকতা প্রতিষ্ঠার একটা হাতিয়ার। এই ঘটনাটি প্রশাসনকে নড়িয়ে দেয়, ডায়ার পরের দিন সন্ধ্যেবেলায় পৌর প্রশাসনের হাত থেকে অমৃতসরের নিয়ন্ত্রণ সামরিক বাহিনীর হাতে নেন, ১২ তারিখের মধ্যে অপরাধীরা গ্রেফতার হন, অন্য কোন হিংসাত্মক ঘটনাও আর ঘটেনি, বৃটিশ সিভিলিয়ানদের নিরাপদে অন্যত্র সরানো হয়। ১৩ তারিখে আরও সৈন্য বহাল করা হয়, সোজা কথায় সব কিছুই ছিলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যদিও সর্বত্র অশান্তির একটা গুজব ছিলই। যাই হোক না কেন, কোনমতেই একথা বলা যাবে না, যে হিংসা ও উন্মত্ততা ১৩ তারিখ পর্যন্ত জারী ছিল, এবং তারই পরিণতি জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড, অর্থাৎ ১০ এপ্রিলের দাঙ্গা ১৩ এপ্রিলের নারকীয়তার কারণ, এমনটা ভাবার যৌক্তকতা বোধহয় খুব জোরালো নয়। সতরাং এর আড়ালে কি আরও কিছু থেকে গিয়েছিল, যা এই উন্মত্ততার জন্য দায়ী ? যে কোন সাম্রাজ্যবাদী প্রশাসন তার অন্যায় কর্মকান্ডের পেছনে একটা নৈতিক ভিত্তিভূমি নির্মাণের কাজটিকে অধিক গুরুত্ব দেয়। বৃটিশ প্রশাসনের কাছে ১০-ই এপ্রিলের দাঙ্গা, মিস শেরউডের ওপর হামলা এর একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল মাত্র। হাউস অব লর্ডসে লর্ড বার্কেনহেড ডায়ারের কর্মকান্ডের ওপর বিতর্কে একবার বলেছিলেন, অমৃতসরে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা গ্লাসগো, বেলফাস্ট বা উইনিপেগে নেওয়ার কথা ভাবাও বিড়ম্বনা হত। রাউলাট আইনের বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার জন্য বৃটিশরা যা করেছিল অথবা সত্যপাল ও কিচলুর গ্রেফতার বা ১০ তারিখে বৃটিশ গুলি চালনায় বহু ভারতীয়র মৃত্যু কেবলমাত্র ১৩ তারিখের ঘটনার ঘনঘটায় হারিয়ে গেছিল। বস্তুত সাম্রাজ্যবাদের একটা মৌল বিশ্বাস ছিল শাসক ও শাসিত উভয়ের ন্যয়-নৈতিকতার স্তরটা আলাদা, শাসকের কাছে হিংসার তীব্রতা বা তুচ্ছতার সংজ্ঞা শাসিতের তুলনায় অন্যরকম, তাই ১১ জন অথবা ৩৭৯ জন ভারতীয়ের মৃত্যু কয়েকজন বৃটিশের মৃত্যুর তুলনায় গুরুত্বের বিচারে শাসকের কাছে তুচ্ছ হতে বাধ্য। এই নৈতিকতার(?) মানদন্ডটি পরিমাপ করে দেয় শাসকের শাসিতের প্রতি গৃহীত কোন একটি পদক্ষেপ আপাতবিচারে ন্যায় না অন্যায় কি বিশেষণে ভূষিত হবে? ১০ তারিখের দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে সামরিক আইন জারী করে অভিযুক্তদের বিচারের যে পক্ষপাতমূলক দৃষ্টান্ত খাড়া করা হয়েছিল, তার নৈতিকতার যাথার্থ্যটিও খুজে পাওয়া মুশকিল। ৫৮১ জন অপরাধীর মধ্য ১০৮ জনের মৃত্যুদন্ড, কিচলু ও সত্যপাল সহ ২৬৪ জনের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর এবং মৃত্যুদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্য অন্ততঃ ১৮ জনকে জনসমক্ষে ফাঁসী দেওয়া হয়েছিল; দেশব্যাপী প্রবল অশান্তির মুখে অবশ্য বাকিদের দন্ডাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয়। সমবেত শাস্তিদানের ঘটনাগুলিও নজরে আসার মতো। অমৃতসরে জল ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, লাহোরে ছাত্রদের কলেজ থেকে বহিস্কার করা হয়। সেখপুরার মতো কোন কোন জায়গায় সমস্ত পুরুষকে মেথরের কাজ করানো হয়েছিল। গুজরানওয়ালাতে বসবাসকারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সমস্ত উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বাধ্যতামূলক স্যালুট দিতে। ডায়ার নিজে, যে রাস্তায় মিস শেরউডকে লাঞ্ছনা করা হয়েছিল, সেই রাস্তা পেরোতে হলে সমস্ত ভারতীয়কে পশুর মতো চার হাতে পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে পেরোনোর নির্দেশিকা জারি করেন (Crawling Act)। এই জঘন্য আইনটি এমনকি ও-ডায়ারেরও সমর্থন পায়নি, যে কারণে ২৫-এ এপ্রিল এটি প্রত্যাহৃত হয় (৯)। সহজেই লক্ষ্যণীয় নীপিড়নমূলক এই ব্যবস্থাগুলি নিষ্ঠুরতার বিচারে যতটা খারাপ ছিল, নিশ্চিতভাবেই ততটা খারাপ ছিল জাতিবৈষম্যের বিচারে এবং তৎসহ এগুলির প্রতিষ্ঠায় জোরালো ইঙ্গিতটি রাখা হয়েছিল শাসক ও শাসিতের পার্থক্য তুলে ধরার কাজে। ঘটনা পরম্পরার মধ্যে আন্তঃশৃঙ্খলটিও লক্ষ্যণীয়; সামরিক শাসন জারী, চূড়ান্ত এবং নাতিপ্রয়োজনীয় কঠোরতার প্রয়োগে আন্দোলনের প্রকাশ রোখার চেষ্টা, বিশৃঙ্খলা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগুলির স্যাডিস্টিক তথা আমোদমূলক প্রয়োগ--- এসবই প্রমাণ করে যে, বৃটিশদের ন্যায় বিচার প্রদানের স্বকপোলকল্পিত দাবিটি আসলে একটি ঢক্কানিনাদ বই নয়। অক্টোবরের ১৯ তারিখে তড়িঘড়ি করে যে ইনডেমিনিটি আইনটি জারী করা হয়েছিল তারও শূণ্যগর্ভতা অচিরেই প্রতিভাত হয়েছিল। বস্তুত সমস্ত দমনমূলক ব্যবস্থার মধ্যে জাতি রূপে ভারতীয়দের হীনতা ও ক্ষুদ্রতা প্রতিপন্ন করার প্রয়াসটি কখনই অস্পষ্ট ছিল না। আমরা জানি, শাসক ও শাসিতের সামাজিক দূরত্বটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর একটি প্রয়াস বরাবরই সাম্রাজ্যবাদের সূক্ষতম বৌদ্ধিক হাতিয়ার রূপে কাজ করেছে। ডায়ারের পূর্বোক্ত Crawling Act এই মেজাজের একটি নিখুঁত প্রতীক। প্রসঙ্গত প্রকাশ থাকুক, এই আইন জারীর দার্শনিক ভিত্তিটিকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল শ্বেতাঙ্গ মহিলাদের অতি উচ্চ সামজিক মর্যাদার রূপকল্পের সঙ্গে। অর্থাৎ মিস শেরউড একজন শ্বেতাঙ্গ মহিলা, তাই স্বাভাবিক ভাবে ভারতীয় ব্যবস্থায় তিনি উচ্চ মর্যাদায় আসীন, সুতরাং তার প্রতি অসৌজন্য প্রদর্শন করা যাবে না। লক্ষ্যণীয় তিনি একজন মহিলা এবং তার ওপর হিংসা যে কার্যত সাধারণ নারীত্বের অবমাননা, তা কিন্তু বলা হল না। এইভাবে আসলে বৃটিশ দমন নীতি সাধারণ ভাবে তো বটেই, জালিয়ানওয়ালাবাগকে কেন্দ্র করে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শাসক ও শাসিতের বিভাজন রেখাটিকে স্পষ্ট করার কাজেই বেশি ব্যপৃত ছিল।
সমস্ত ঘটনা পরম্পরায় ডায়ারের অনুশোচনার কোন ঈঙ্গিত কখনই পাওয়া যায়নি। তিনি জালিয়ান ওয়ালাবাগের ঘটনাকে তার বাধ্যতামূলক কর্তব্য বলে জারী করতে সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন। কোন প্রমাণ ছাড়াই বারবার প্রচার করেছেন জনতার মধ্য এরকম একটা মনোভাব বেড়ে উঠেছিল; বৃটিশ শক্তির সমাপ্তি আসন্ন, এবং জনতাকে জালিয়ানওয়ালাবাগে একধরণের নো-ট্যাক্স আন্দোলনের দিকে পরিচালনার চেষ্টা হয়েছিল। তাদের জমায়েতটি সোজাসুজি সামরিক শাসনকে অমান্য করার একটা প্রয়াস বই আর কিছু নয়। সুতরাং সাম্রাজ্যের স্বার্থরক্ষায় গুলি চালানোর মতো কঠোর ও বেদনাদায়ক কর্তব্য তাকে করতে হয়েছিল। তার নিজের স্বীকারোক্তি অনুসারেই তিনি গুলি চালানোর বিষয়টিকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, যা সমবেত জনতার জন্য একটা চূড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে; সেই সঙ্গেই সমগ্র পাঞ্জাবে একটা নিরঙ্কুশ বার্তা পাঠাবে শাসকের সক্ষমতা ও শাসন অধিকার সম্পর্কে। ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল এবং পাঞ্জাব সরকারের সরকারী বয়ানে ডায়ারের এই ভাষ্যটি সমর্থনও পায়, অন্যদিকে এ সংক্রান্ত কোন অনুসন্ধান কমিটি বসানোর বিষয়টিও একশ্রেণীর প্রভাবশালী বৃটিশ অফিসার ও নেতার বিরোধীতার মুখে পড়ে এই যুক্তিতে যে, এর ফলে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে এবং ভারতে সন্ত্রাসবাদীরা যেমন এর দ্বারা উৎসাহিত হবে তেমনই জাতিবিদ্বেষের প্রবণতা বাড়তে পারে। যদিও এই বিরোধীতা অগ্রাহ্য করে শেষ পর্যন্ত তদন্ত কমিশন বসানো হয়, যা হান্টার কমিশন নামে পরিচিতি পায়, এর চেয়ারম্যান স্কটল্যান্ডের বিচারক লর্ড উইলিয়াম হান্টারের নামানুসারে। কমিশনের সামনে ডায়ার মোটের ওপর তার বক্তব্যে অবিচল থাকেন, এবং স্পষ্টতই স্বীকার করেন যে, এ ব্যাপারে আমার স্পষ্ট মানসিক প্রস্তুতি ছিল-- “I had made up my mind that I would do all man to death if they were going to continue the meeting.” সমগ্র পাঞ্জাবের ওপর মানসিক ভীতির বাতাবরণ সৃষ্টির ব্যপারে কমিশনের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জোর দিয়ে বলেন, । was going to punish them. My idea to the military point of view was to make a wide impression ... yes throughout Punjab. I wanted to reduce their moral; the moral of the rebels. (10). এমনকি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে তিনি দাবি করেন, আমার সেনাদের হাতে আরও গুলি থাকলে আমি সেগুলিও ব্যবহার করতে দ্বিধা করতাম না। এই স্বাক্ষ্যের প্রায় ছত্রে ছত্রে ডায়ার স্বীকার করে নেন যে এই সমস্ত ঘটনাটি তার পরিকল্পনার অঙ্গ, যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল, সাম্রাজ্যকে রক্ষা করা এবং সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিদ্রোহীদের নৈতিক বলের জায়গাটিকে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া। হান্টার কমিটি কিছু নিজস্ব বিরোধীতার জায়গা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ডায়ারকে দোষী সাব্যস্ত করে, বিশেষত তার আন-বৃটিশ ব্যবহার কঠোরভাবে সমালোচিত হয়, আর্মি কাউন্সিল অবশ্য পুরো বিষয়টিতেই রাজনৈতিক স্বার্থানেষীদের হাত দেখতে পেয়েছিল, যাদের কাজই হল যে কোন সংকটে আর্মিকে সামনে এগিয়ে দেওয়া। ডায়ারকে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। শাস্তিবিধানের প্রসঙ্গে অবশ্য চাপান উতোর চলতেই থাকে, এমনকি রক্ষণশীলদের একটি গোষ্ঠী যারা আগাগোড়াই ডায়ারের অমৃতসর কান্ডকে সাম্রাজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সাহসী পদক্ষেপ বলে মনে করতেন, তাদের তরফে ডায়ারের সপক্ষে লড়াই করার জন্য অর্থ ভান্ডার গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়। ইংলান্ডে তো বটেই ভারতেও বসবাসকারী ইংরেজ, সেনার সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজনের ব্যপক সমর্থন ডায়ার লাভ করেন। ছ হাজার বৃটিশ ভারতীয় মহিলা, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডায়ারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে চিঠি লেখেন। বৃটিশ জনমত এবং খ্যাতিমান পত্রপত্রিকাগুলির তরফেও ডায়ারের প্রতি নির্লজ্জ সমর্থনের প্রকাশটিও নজরে পড়ার মতো। দ্য মর্ণিং পোস্ট এবং দ্য টাইমস্, ডায়ারের প্রতি বৃটিশ রাজনীতিকদের একাংশ ও কমিশনের বিরূপ মনোভাবের সমালোচনা করছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই মর্ণিং পোস্টের উদ্যেগেই ডায়ারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এরা এমনকি ডায়ারের সমর্থনে বলেতে যেয়ে ভারত সচিব মন্টেগুর অদক্ষতা, পক্ষপাতদুষ্টতার কথা বড় করে তুলে ধরতে থাকে, তাদের মনে হয়েছিল, ডায়ার ও তার কর্মকান্ডের প্রতি মন্টেগুর ভ্রান্ত নীতি ও মতামত মূলত ইহুদী ধর্মীয় পরিচয়জনিত কারণে প্রাচ্যের প্রতি তাঁর দূর্বলতার দ্যেতক। এমনকি ১৯২৭-এ ডায়ারের মারা যাওয়ার সময় রাজকীয় আদালতের জুরীরা মেনে নেন যে, ডায়ার তৎকালীন পরিস্থিতির দাবী মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অমৃতসরে নিয়েছিলেন, ভারত সচিব ভ্রান্তভাবে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কার করেন; জুরীদের মধ্যে একমাত্র হ্যারল্ড ল্যাস্কি বিরোধী মত পোষণ করছিলেন (১১) । আসলে পরিস্থিতিসঞ্জাত প্রতিক্রিয়া, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ এই সমস্ত কিছু বৃটিশ এক- চোখোমীর এক-একটা অনবদ্য ধরতাই। বস্তুত যখনই সাম্রাজ্যিক চাহিদার প্রয়োজনীতা বড় হয়ে উঠেছে, এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও আইরিশ আন্দোলন দমন বা শ্রমিক আন্দোলনের বাড়বাড়ন্ত দেখা গেছে, তখনই বৃটিশ শাসক শ্রেণি এক অদ্ভুত শাসনতান্ত্রিক নৈতিকতার গল্পের আশ্রয় নিয়েছে, যার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বিচারে নিজেদের কাজে নৈতিক যথার্থতার অন্বেষণ ও সবাইকে সেটা গলাধঃকরণ করতে বাধ্য করা। কর্তব্য, রাজকীয় দায়িত্ব, পিতৃভূমির প্রতি কর্তব্য, খ্রীষ্টানত্বের সভ্যতার ধারণার সঙ্গে কোন অখ্রীস্টান সভ্যতার দ্বন্দ্বে অবশ্যাম্ভাবী রূপে খ্রীস্টানত্বের ধ্বজা তুলে ধরার জন্য বৃটিশ শাসককুল সব কিছুই করতে রাজী ছিল, শাসিতের স্বার্থ অথবা কোনো অস্তিত্ত্ব তারা স্বীকার করেনি। আরও মজার ব্যাপার প্রায় সময়ই একেবারে হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের কাজকর্মের একটি নিশ্চিন্ত পৃষ্ঠপোষকতা তারা পেয়ে এসেছে দেশের গরিষ্ঠ মানুষদের কাছ থেকে এবং অবাক করা হলেও সত্য যে উপনিবেশের এক শ্রেণীর মানুষ নানাবিধ স্বার্থ, প্রাপ্তি কখনওবা কেবলমাত্র গরিমা ও চমকে শাসক শ্রেণীর প্রলোভনে পা দিয়ে তাদের সমর্থনে এককাট্টা হয়েছে । মনে রাখতে হবে ডায়ারের সমর্থনে যে অর্থভান্ডার গড়ে তোলা হয়েছিল, তার এক-তৃতীয়াংশ এসেছিল ভারত থেকে, এবং সরকারী অফিসারদের এই চাঁদা দেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু সরকারী নিষেধাজ্ঞাও ছিল। আরও উল্লেখ্য যে; ভারত থেকে যে ব্যক্তিগত অনুদানগুলি গেছিল, তার মধ্যে সবচাইতে বেশি সংখ্যায় ছিল দশ টাকার কম অর্থের অনুদানও। অর্থাৎ রাজের সর্বব্যাপী আবেদনের শিকড়টি দেশের মাটিতে যে বিস্তারটি লাভ করেছিল, তার গভীরতাটিও অনুমেয়। অমৃতসর মামলা তথা ডায়ার ও সাম্রাজ্যের এই উপাখ্যানটি নানা দিক থেকেই এই সমস্ত সত্য গুলির জটিল সমীকরণটিকে বুঝতে সাহায্য করে।
References:
1. Sayer, Derek , British reaction to the Amritsar Massacre, 1919-1920, Past and Present, no. 131 (May, 1991), P: 132, OUP.
2. Ibid, P: 132.
3. Ibid, P; 133.
4. Faurneax, Rupart, Massacre at Amritsar, P: 176-177, London, 1963.
5. Dutta, V.N, Jalianwala Bagh, frontispiece, Ludhiana, 1969.
6. Ram, Raja, Jalianwala Bagh Massacre : A Premeditated Plan, P: ix, Chandigarh, 1969. & Fein, Helen, Imperial Crime and Punishment: The Masscre at Jalianwalabag and British Judgement, 1919-20, P: xii-xiii, Honolulu, 1977.
7. Sayer, Derek, British reaction to the Amritsar Massacre 1919-1920 Past and Present, no. 131 (May, 1991), P: 133, OUP.
8. Dutta, V.N, Jalianwala Bagh, frontispiece, P: 9–20, Ludhiana, 1969.
9. Sayer, Derek, British reaction to the Amritsar Massacre 1919-1920, Past and Present, no. 131 (May, 1991), P: 142, OUP.
10. Ibid, P: 146.
11. Ibid, P: 163–164.
Bibliography
a) Chandra, Bipan and others, Indian Struggle for Independence, 1857-1947, New Delhi, Reprint, 1989.
b) বন্দোপাধ্যায়, শেখর, পলাশি থেকে পার্টিশান, কলকাতা, ২০০৬।
c) দেশ, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯, কলকাতা।
d) Dutta, V.N, Jalianwala Bagh, Ludhiana, 1969.
e) Ram, Raja Jalianwala Bagh Massacre : A Premeditated Plan, Chandigarh, 1969.
f) Fein, Helen, Imperial Crime and Punishment: The Masscre at Jalianwalabag and British Judgement, 1919-20, Honolulu, 1977.
g) Faurneax, Rupart, Massacre at Amritsar, London, 1963.
h) Oxford Journals, OUP, The Past and Present Society, No: 131, May, 1991.
* ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহীত
* ছবিটি গুগল থেকে সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment